বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

২৮ জেলায় শিক্ষার্থীদের গণমিছিল

শরীয়তপুর টাইমস্ ডেস্কঃ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গণমিছিল কর্মসূচি গতকাল শুক্রবার দেশের কমপক্ষে ২৮ জেলায় পালিত হয়েছে। ৬টি স্থানে সংঘাত ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলেও বাকি ২২ জায়গায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের খবর পাওয়া গেছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নামেন রাস্তায়। এ সময় বেশ কিছু স্থানে শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, শিক্ষক ও নানা শ্রেণি–পেশার মানুষও কর্মসূচিতে অংশ নেন।

সমাবেশে শিক্ষার্থীরা ছাত্রহত্যার বিচার, গ্রেপ্তার ছাত্রদের মুক্তি, হয়রানি বন্ধসহ ৯ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবি জানান। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি ‘প্রার্থনা ও ছাত্র–জনতার গণমিছিল’ শুরু হয় গতকাল জুমার নামাজের পর। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে থাকতে দেখা যায়।

ঢাকায় ১১ স্থানে কর্মসূচিঃ

ঢাকার অন্তত ১১টি স্থানে গতকাল গণমিছিল কর্মসূচি পালিত হয়েছে। এর মধ্যে উত্তরার একটি স্থান ছাড়া সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বিকেলে উত্তরার ১১ নম্বর সেক্টরে সরকারি দলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের মারধর করে বাসায় চলে যেতে বলেন। শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ শুরু করলে সংঘর্ষ বেধে যায়। এর আগে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উত্তরার ৬ নম্বর সেক্টরের রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।

বিকেল চারটার পর রাজধানীর মাটিকাটা বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ইসিবি চত্বরে যান। পরে ইসিবি চত্বরে সমাবেশ হয়। এ সময় ইসিবি চত্বর ও এর আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য ছিলেন।

■ ঢাকার অন্তত ১১টি স্থানে গণমিছিল। এর মধ্যে উত্তরার একটি বাদে সব জায়গায় শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।

■ চট্টগ্রাম নগরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়কে ১০ কিলোমিটার হেঁটে হাজারো শিক্ষার্থী তাঁদের দাবি জানিয়েছেন।

গতকাল বেলা দেড়টার পর থেকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে শুরু করেন। তখন দেয়ালে প্রতিবাদসংবলিত বিভিন্ন বার্তা লেখা হয়। পরে শুরু হয় প্রতিবাদ সমাবেশ। বেসরকারি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউবি), ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি), স্টেট ইউনিভার্সিটি, কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি ও গ্রিন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা এই কর্মসূচিতে অংশ নেন।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির সামনে থেকে গণমিছিল বের করেন বেসরকারি ব্র্যাক ও ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েক শ শিক্ষার্থী। মিছিলটি রামপুরা ব্রিজ ঘুরে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে যায়। পরে মিছিলটি সেখান থেকে আবার রামপুরা ব্রিজ হয়ে দুপুর ১২টার দিকে ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।

বেলা দুইটার দিকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ের বায়তুল মা’মুর জামে মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের করেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোজকন। পরে সেখানে আসেন ঢাকা কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ পাবলিক কলেজ, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী নূর মোহাম্মদ পাবলিক কলেজ ও আইডিয়াল কলেজের শিক্ষার্থীরা।

বৃষ্টির মধ্যেই বিকেল সোয়া চারটার দিকে সায়েন্স ল্যাব থেকে শাহবাগ অভিমুখী সড়কে গণমিছিল বের করা হয়। সায়েন্স ল্যাবে বিক্ষোভে কয়েক শ শিক্ষার্থী থাকলেও শাহবাগ অভিমুখী মিছিলে যোগ দেন কয়েক হাজার মানুষ। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে মিছিলটি শাহবাগে এসে পৌঁছায়।

সায়েন্স ল্যাব ও মিরপুরের ইসিবি চত্বরে শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিভাবকও সন্তানদের সঙ্গে এসে যোগ দেন।

বিভিন্ন স্থানে শান্তিপূর্ণ মিছিল

চট্টগ্রাম নগরে বৃষ্টি উপেক্ষা করে সড়কে ১০ কিলোমিটার হেঁটে হাজারো শিক্ষার্থী তাঁদের দাবি জানিয়েছেন। বেলা দুইটার দিকে নগরের আন্দরকিল্লা থেকে শুরু হওয়া মিছিল শেষ হয় বেলা পাঁচটার দিকে নগরের বহদ্দারহাটে গিয়ে। পথে নিউমার্কেট মোড় ও টাইগারপাসে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা দেয়াল লিখন ও গ্রাফিতি এঁকে ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ জানান। এ সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা ও নির্বিচার হত্যার প্রতিবাদ, মামলা প্রত্যাহার, আটক শিক্ষার্থীদের মুক্তি, ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধসহ বেশ কিছু দাবি জানান তাঁরা।

রংপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরাও রাজপথে নেমে বিক্ষোভ সমাবেশ ও পদযাত্রা কর্মসূচিতে অংশ নেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়শিক্ষকদের একাংশ অংশ নেন। 

বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে গণমিছিল কর্মসূচি পালন করেছেন বরিশাল ব্রজমোহন (বিএম) কলেজের শিক্ষার্থীরা। ফেনী শহরের শহীদ শহীদুল্লা কায়সার সড়কের জহিরিয়া মসজিদের সামনে থেকে গণমিছিল শুরু হয়। 

কুমিল্লা নগরের ঝাউতলা ছাতা মসজিদ থেকে গণমিছিল শুরু হয়। পুলিশ লাইনস রেসকোর্স হয়ে মিছিলটি শাসনগাছা এলাকা হয়ে আবার রেসকোর্স আসে। এ সময় শিক্ষার্থীরা স্লোগান দেন, ‘মেধা না কোটা, মেধা মেধা’, ‘আবু সাঈদের রক্ত, বৃথা যেতে পারে না’।

কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনে সংহতি জানিয়েছেন দুই শিক্ষক। বৃষ্টিতে ভিজে বগুড়া শহরের রাস্তায় দলে দলে শিক্ষার্থীরা নামেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যোগ দেন অভিভাবকসহ পেশাজীবীরাও। এ ছাড়া গণমিছিল হয়েছে কিশোরগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, কক্সবাজার, সিরাজগঞ্জ, গাইবান্ধা, পিরোজপুর, পাবনা, দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নড়াইল, বরগুনা, যশোর, যশোরের কেশবপুর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে।

ছাতা উল্টো করে ধরে প্রতিবাদ

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে বিভিন্ন দিক থেকে ছাত্ররা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের বাতেন খাঁ মোড়ে এসে জড়ো হন। পথসভা চলাকালে আন্দোলনকারীরা ছাতা উল্টিয়ে মাথায় ধরেন।

এ সময় আন্দোলনকারীদের মধ্যে নেতৃস্থানীয় একজন বলেন, ‘আমরা আজ বৃষ্টিতেই কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। আর বৃষ্টির মধ্যে আমরা আমাদের ছাতা উল্টো করে ধরে একটা কর্মসূচি করছি। এটার অর্থ হচ্ছে, আমাদের ছাতা আছে; কিন্তু এটা আমাদের কোনো কাজে আসছে না। আমাদের বৃষ্টিতে ভিজতেই হচ্ছে। একইভাবে রাষ্ট্র হচ্ছে একটা ছাতার মতো, আমাদের নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য; কিন্তু রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিচ্ছে না।’

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post