বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

জাজিরায় ছেলের পিটুনিতে বাবার মৃত্যু, হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে মা ও বোন

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলায় ছেলের চাহিদামত ২০ হাজার টাকা দিতে না পারায় মারধরের শিকার হয়ে বাবা হানিফা মোল্লা(৭২) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে।

শুক্রবার(২০ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হানিফা মোল্লার মৃত্যু হয়।

এর আগে বৃহস্পতিবার(১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় উপজেলার কাজিরহাট ডুবিসায়বর এলাকায় এঘটনা ঘটে। এঘটনায় মা গোলাপি বেগম(৬০) ও বোন পারুল আক্তার(২৫) কেও পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে ফারুক মোল্লা(৪০) এর বিরুদ্ধে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, জাজিরা উপজেলার কাজিরহাট ডুবিসায়বর এলাকার বাসিন্দা ফারুক মোল্লা(৪০) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার বাবা হানিফা মোল্লা ও মা গোলাপি বেগমের কাছে ২০ হাজার টাকা দাবি করেন। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে বাবা হানিফা, মা গোলাপি ও বোন পারুলকে গাছের মোটা গুড়ি দিয়ে পিটিয়ে গুরুতর আহত করেন। পরে আহতাবস্থায় হানিফা, গোলাপি ও পারুল আক্তারকে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। কর্তব্যরত চিকিৎসক হানিফা মোল্লা ও গোলাপি বেগমের শারীরিক অবস্থা খারাপ দেখে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করেন। এরপর শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হানিফা মোল্লার মৃত্যু হয়। এছাড়াও মা গোলাপি বেগম ও বোন পারুল আক্তার এখনো চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন।

নিহতের ভাগনী আলেয়া বেগম বলেন, "ফারুক আমার মামাতো ভাই। দীর্ঘদিন প্রবাসে(মালয়েশিয়া) ছিল। সেখানেই বিয়ে করেছিল। পরে অসুস্থতার কারনে দেশে আসে। দেশে আসার পর কোন কাজকর্ম না করে বসে বসে দিন পার করা শুরু করে। আর কোন টাকা পয়সার প্রয়োজন হলে আমার মামা হানিফা মোল্লা ও মামী গোলাপী বেগমের কাছে চাইতো। কিন্তু আমার মামা তেমন বৃত্তবান না হওয়ায় সবসময় ছেলের চাহিদামত টাকা দিতে পারতো না। একারনে বিভিন্ন সময় ঘরের মধ্যে ভাঙ্গচুর ও মামা মামীর সাথে খারাপ ব্যবহার করতো। সর্বশেষ মামার কাছে ২০ হাজার টাকা চেয়েছিল। তা দিতে না পারায় ঘরের মধ্যে থাকা আসবাবপত্র ভাঙচুর শুরু করলে ছেলেকে বাধা দেয় মামা হানিফা মোল্লা। তখনই গাছের একটি বড় গুড়ি দিয়ে মামার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে ফারুক। তখন মামী গোলাপি বেগম ও মামাতো বোন পারুল বাধা দিতে যাওয়ায় তাদেরকেও বেধড়কভাবে পিটুনি দেয়। এতে তারা তিনজনই গুরুতর আহত হয়। পরে জাজিরা হাসপাতালে নিলে অবস্থা গুরুতর দেখে চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যাওয়ার পরামর্শ দেয়। ঢাকায় যাওয়ার পরেরদিন আমার মামা মারা যান। মামী গোলাপি বেগমের অবস্থাও তেমন ভালোনা।"

নিহত বৃদ্ধার প্রতিবেশী মো: উজ্জল হোসেন বলেন, ফারুক বিদেশ থেকে দেশে আসার পর মানসিকভাবে তেমন সুস্থ ছিলনা। বিভিন্ন সময় টাকার জন্য বাবা মায়ের সাথে রাগারাগি করতো। এলাকায় কারো সাথে তেমন মিশতো না। শেষ পর্যন্ত নিজের বাপটাকে পিটিয়ে মেরে ফেললো। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।

বিষয়টি নিয়ে জানতে নিহত হানিফা মোল্লার বাড়ীতে গিয়ে পাওয়া যায় ঘাতক ছেলে ফারুক মোল্লাকে। তার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তিনি কোন কথা না বলে অস্বাভাবিক আচরণ করে প্রতিবেদককে এড়িয়ে যান।

এবিষয়ে জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) আল-আমিন বলেন, "আমরা জানতে পেরেছি বাবার কাছে ২০ হাজার টাকা চেয়ে না পাওয়ায় ফারুক মোল্লা নামে এক ব্যক্তি তার বাবা-মা ও বোনকে পিটিয়ে আহত করেছেন। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার বাবা হানিফা মোল্লার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় এখনো কোন অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।"

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post