বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

জাজিরা হাসপাতালে ১৩ বছর ধরে ডেন্টাল বিভাগ বিকল

চিকিৎসা পাচ্ছেনা দন্ত রোগীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডেন্টাল বিভাগ থাকলেও বিগত ১৩ বছর যাবৎ দাঁতের চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেনা রোগীরা। বার বার চাহিদাপত্র পাঠিয়েও কোন সুরাহা মিলছে না বলে বলছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দাঁতের চিকিৎসা ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে দরিদ্র রোগীরা সরকারি এ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে ডেন্টাল বিভাগটিতে মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ঠিক থাকলে চিকিৎসক থাকেনা আর চিকিৎসক থাকলে মেশিনসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ঠিক থাকেনা। এমন ভাবেই চলে আসছে। এতে চিকিৎসাবঞ্চিত হয়ে আগত রোগীদের ফিরে যেতে হচ্ছে। ফলে, উপজেলার মধ্যে ভালো কোন ডেন্টাল চিকিৎসালয় না থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন দন্ত রোগীরা। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ অবগত থাকার পরেও দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও কোনো সুরাহা করা হয়নি।

গত সোমবার সরেজমিনে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের আউটডোরে দাঁতের চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা শুধু ব্যবস্থাপত্র (প্রেসক্রিপশন) নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন।

দাঁতের চিকিৎসা নিতে আসা জিয়াসমিন নামে এক রোগী বলেন, আমার দাঁতে ব্যাথা হয়। ডাক্তার বলেছেন দাঁত ফেলে দিতে হবে। কিন্তু এই হাসপাতালে তা করতে পারবে। তাই ওষুধ লিখে দিয়েছে।

এছাড়াও আরো একাধিক ভুক্তভোগী রোগী অভিযোগ করে বলেন, হাসপাতালে দাঁতের চিকিৎসা দেয়ার নাম করে আমাদের সাথে মস্করা করা হচ্ছে। একাধিকবার এসেও দাঁতের পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছেনা। ডাক্তার শুধু প্রেসক্রিপশন লিখে দিয়েই বিদায় করছে। এমন হলে আমরা আর কোথায় যাবো। এই সমস্যা সমাধানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতি আছে বলেই দ্রুত কোন সমাধান হচ্ছেনা।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০১১ সালের আগে ডেন্টাল ইউনিটে মেশিন স্থাপন করা হয়। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে কোন চিকিৎসক না থাকায় সেবা কার্যক্রম চালু করা যায়নি। স্থাপিত মেশিনটি পরে পরে নষ্ট হয়। এরপর আবারও ২০২১ সালে নতুন মেশিন স্থাপণ করা হলেও তখনও কোন চিকিৎসক না থাকায় মেশিনটি বেকার পরে থেকে নষ্ট হয়ে যায়। পরে ২০২৩ সালে চিকিৎসক থাকলেও মেশিন ঠিক না থাকায় রোগীদের শুধু ব্যবস্থাপত্র(প্রেসক্রিপশন) দিয়েই বিদায় করতে হচ্ছে। ইতোপূর্বে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একাধিকবার মেশিনটির উপকরণের চাহিদাপত্র দেয়া হলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহি:বিভাগে প্রতিদিন অন্তত ৩০-৩৫ জন রোগী আসেন দন্ত চিকিৎসা সেবা নিতে। শুধু পরামর্শ নিয়েই ফিরে যেতে হচ্ছে তাদের। ফলে, বিপাকে পড়েছেন দন্ত রোগীরা, বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা থেকে। 

ডেন্টাল ইউনিটের সহকারী সার্জন ডা. প্রাণ কৃষ্ণ মালো বলেন, "হাসপাতালে যোগদান করেছি প্রায় ৬ মাস হলো। শুনেছি আরো আগে থেকে ডেন্টাল মেশিনটি নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। দাঁতের চিকিৎসা সার্জারি নির্ভর। তাই পরিপূর্ণ চিকিৎসা সেবা দিতে গেলে যন্ত্রপাতি, ম্যাটেরিয়ালস এর সঙ্গে জীবাণুমুক্ত করার সবকিছু থাকতে হবে। অন্যথায় অপারেটিভ ট্রিটমেন্টগুলো দেয়া সম্ভব হয় না। আপাতত শুধু ওষুধ লিখে দিয়ে আর পরামর্শ দিয়ে রোগীদের বিদায় করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, ডেন্টাল বিভাগের মেশিনের বিষয়ে আমাদের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরত্ব দিলে হয়তো দ্রুত নষ্ট মেশিনটি মেরামত কিংবা নতুন মেশিন স্থাপণ করা সম্ভব। আমরা কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো অব্যাহত রেখেছি।

জানতে চাইলে জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ আবুল হাদি মোহাম্মদ শাহ্‌ পরান বলেন, "জাজিরা হাসপাতালে বর্তমানে ডেন্টাল চিকিৎসক রয়েছে কিন্তু প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ঠিক নেই। তবে তা মেরামতের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।"

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post