নিজস্ব প্রতিবেদক:
‘জমির প্রকৃতি পরিবর্তন করা যাবে না'এমন সরকারি নির্দেশ থাকলেও শরীয়তপুরের বিভিন্ন উপজেলায় ফসলি কৃষি জমিগুলো পরিণত করা হচ্ছে গভীর পুকুরে। অপরিকল্পিতভাবে গত একমাসে জেলার হাজার হাজার বিঘা ফসলি জমিতে পুকুর খনন করা হয়েছে।
সদর উপজেলার রুদ্রকর ইউনিয়নের দেওভোগ এলাকায় প্রায় একমাস ধরে ছয়টি এক্সেভেটর দিয়ে ৪৮০ একর কৃষি জমিতে জোরপূর্বক মাছের ঘের করছেন প্রভাবশালী একটি চক্র। এতে একদিকে জমির উর্বরতা হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে বিনাশ হচ্ছে ফসলি জমি। কমছে ফসলি জমির পরিমাণ। এছাড়া উঁচু জমি গর্তে পরিণত হওয়ায় সেচ কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হচ্ছে। জেলার ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, নড়িয়া, গোসাইরহাট, জাজিরায় কৃষি জমি কেটে পুকুর তৈরী চলছে।
কৃষকরা পুকুর খনন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধনসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছে একাধিক বার। কিন্তু এরপরও কোনো সুরাহা মিলছে না।
অভিযোগ উঠেছে, পুকুর খননে স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে ম্যানেজ করে দালালদের মাধ্যমে অবৈধভাবে এসব পুকুর খনন করা হচ্ছে। এতে সাধারণ কৃষকরা তাদের কাছে পুরোপুরিভাবে জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এমনকি পুকুর খনন করতে জমি ইজারা না দিতে চাইলে জমির মালিকদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, নানাভাবে স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে চলছে এসব পুকুর খনন কাজ। এক শ্রেণির দালালচক্র কৃষকদের অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে ৮-১০ বছরের জন্য পুকুর খননের কাজে জমি ইজারা নিচ্ছেন। আবার ইজারা দিতে না চাইলে জমির মালিকদের ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। রাজি না হলে জোর করে রাতারাতি পুকুর খনন করা হচ্ছে। ফলে কৃষকরা নিরুপায় হয়ে পড়েছেন। বারবার অভিযোগ জানালেও প্রশাসন নির্বিকার।
দেওভোগ গ্রামের কৃষক কামরুল হাসান বলেন, আমার জমি দিতে না চাইলেও স্থানীয় প্রভাবশালী সুমন মৃধা, মান্নান খান, দুলাল মৃধা, জিয়া মোল্লাসহ কয়েকজন জোর করে পুকুর খনন করছে। ওই জমি ছাড়া আমার আর কোনো জমি নেই। আমি নিরুপায় হয়ে পড়েছি। বাবা আপনারা আমার জমিটুকু উদ্ধার করে দেন।
কৃষক আজহার হাওলাদার জানান, এই জমিতে আমি ধান, গম, ভুট্টা সহ অনেক কিছুই চাষ করে বাজারে বিক্রি করে সংসার চালাতাম। এখন তাও সম্ভব না। আমি নিষেধ করেছিলাম আমার জমি নিতে কিন্তু ওরা বললো আমরা জোর করে করবো আপনি দিলে দেন না দিলে নাই। আমরা খামার করবোই। তাই ভয়ে কিছু বলি না। ওরা প্রতিনিয়ত আমাকে ভয়ভীতি দেখায়। এখন যে হারে পুকুর খনন হচ্ছে তাতে ফসলি মাঠ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।
এবিষয়ে খামার মালিক জিয়া মোল্লা বলেন, আমরা এখানে মাছের খামার করবো। এখানে প্রশাসনের লোক আসসিলো তারা বন্ধ করে দিয়ে গেছে। আমি তাদের সাথে মিমাংসা করে এসেছি। এখন আমার কাজ করতে কোন বাঁধা নেই। আপনি ডিসি স্যারের সাথে গিয়ে কথা বলেন।
জানতে চাইলে জেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন বলেন, কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন আছে। তবে শ্রেণি পরিবর্তন করে পুকুর খনন করা যাবে না। পুকুর খনন বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি। না হলে অচিরেই এই জেলায় খাদ্য নিরাপত্তা হুমকিতে পড়বে।
শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, ফসলি জমিতে পুকুর খননের ওপর সরকারের কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। কেউ ফসলি জমিতে পুকুর খনন করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।