বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

জাজিরা হাসপাতালের মুমূর্ষু অবস্থা, ভবন ধসের শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ভবনটি নির্মাণকাল ১৯৮১-৮২ সাল। প্রায় চল্লিশ বছর পাড় হলেও ভবনটি পুনঃনির্মাণের কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এতে অবস্থা অনেকটা আশঙ্কাজনক হয়ে উঠেছে। ভবনটির ছাদ, সানসেট, ভিমসহ বিভিন্ন জায়গায় ফাটল ধরে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ছাদ, ভিমসহ বিভিন্ন স্থানে প্লাস্টার উঠে গিয়ে বেরিয়ে পড়েছে রড। এসব কারণে একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে টয়লেটসহ ভবণের বেশ কয়েকটি রুম। এ ছাড়া হঠাৎ হঠাৎ খুলে পড়ছে ছাদের পলেস্তারা। রোগীদের খাওয়া ও ঘুমের সময় ছাদ থেকে পড়ছে বালু, বৃষ্টির দিনে ছাদ চুয়ে ঢুকে পড়ছে পানি। সব মিলিয়ে জরাজীর্ণ হাসপাতালের এ ভবনটির কারনে হাসপাতালটি নিজেই মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে। তৈরী হয়েছে মৃত্যুফাঁদে। যেকোনো সময় ধসে পড়তে পারে ভবনটি। সেই ঝুঁকি নিয়েই চলছে হাসপাতালটিতে চিকিৎসা সেবা। এতে রোগীসহ তাদের স্বজন ও চিকিৎসক, নার্সসহ হাসপাতালে কর্মরতদের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে গভীর উদ্বেগের।

জাজিরা উপজেলায় একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়নের প্রায় ২ লাখ মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র চিকিৎসা কেন্দ্র জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। তার উপর আবার হাসপাতালটি ৫০ শয্যা বিশিষ্ট। যদিও হাসপাতাল ভবনের পাশে একটি ট্রমা সেন্টারের ভবন রয়েছে সেখানে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে নারী ও শিশু রোগীদের ভর্তি ওয়ার্ড জরাজীর্ণ ভবনটিতেই রয়েছে। এতে ভর্তি থাকা রোগী ও স্বজনরা ফাটল ধরা দেয়াল আর ছাদের নিচে সর্বদা আতঙ্কগ্রস্ত থাকে। তবুও বাধ্য হয়ে জীবন বাজি রেখে থাকতে হচ্ছে এমন জরাজীর্ণ ভবনে। চিকিৎসক, নার্সদের দিতে হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ইতোমধ্যে কয়েক দিন আগেই সিলিং ফ্যান খসে পড়ে এক শিশু রোগীর বৃদ্ধা দাদী মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন। এতে তার মাথায় ১২টি সেলাই দিতে হয়েছে।

শিশুসন্তানের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যার কারনে হাসপাতালে থাকতে হচ্ছে মর্জিনা বেগমকে তিনি বলেন, "এসেছি সন্তানের চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এখানকার যে অবস্থা আল্লাহ যদি রক্ষা করে তাহলে হয়তো বাড়ী ফিরে যেতে পারবো। এই ভবন যেকোন সময় ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনা আছে।"

নাতনী অসুস্থ হওয়ায় ভর্তি দিয়েছে চিকিৎসক সাথে আছেন নুরজাহান বেগম। শিশু ওয়ার্ডের ১০নং বিছানায় বসে ছিলেন তিনি। গণমাধ্যমকর্মী দেখে ডেকে নিয়ে ভবনের দেয়াল ও ছাদের ফাটলগুলো দেখিয়ে বলতে লাগলেন, 'আমরা এখানে চিকিৎসা নিতে আইছি, অহন যদি কোন দুর্ঘটনা ঘটে এই দায়ভার কে নিবো? আমাগো ভালো জায়গা দেক নাইলে এমন জায়গায় ভর্তি রাহার দরকার কি?'

এছাড়াও কথা হয় কয়েকজন স্থানীয়দের সাথে তারা বলেন, 'দেখেছি ভবনটি মেরামতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, কিন্তু প্রতিবারই তা সীমাবদ্ধ থেকেছে কেবল সামান্য মেরামত ও রঙ করার মধ্যে। যতই দিন যাচ্ছে ভবনটির অবস্থা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে। এই পরিস্থিতিতে এখনই ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে ভেঙে ফেলা না হলে, যেকোনো সময় ঘটে যেতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা।'

হাসপাতালের নার্সিং সুপারভাইজার রেখা রানি বিশ্বাস বলেন, "ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দীর্ঘদিন এ ভবনে আমরা চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু বর্তমান অবস্থায় এটি খুবই মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আমরা প্রতিনিয়ত জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এ ভবনটিতে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানানোর পরও কোনো সমাধান পাচ্ছিনা।"

হাসপাতালটির আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার(আরএমও) ডা. রোমান বাদশা বলেন,"হাসপাতাল ভবনটি এমন বেহাল অবস্থায় রয়েছে যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। প্রায়ই ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পরে রোগীরা আহত হয়। একবার নার্স রুমের ছাদের পলেস্তারা ভেঙে পরে দুজন নার্স আহত হয়েছেন। আমরা জীবনের শঙ্কা নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। রোগীরাও শঙ্কিত থাকেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষনা করে নতুন ভবন নির্মাণ করা উচিৎ।"

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফুন নাহার বলেন, "আমাদের হাসপাতাল ভবনটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। ভবনটির অবস্থা সম্পর্কে জানিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে পরিত্যক্ত ঘোষণার সুপারিশ করেছি এবং নতুন ভবন নির্মানের আবেদন করেছি কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো সারা পাইনি। বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রোগীদের সেবা দিতে হচ্ছে। এতে রোগীসহ আমাদের নার্স ও চিকিৎসকেরা জীবনাশঙ্কায় রয়েছে।"

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post