বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

যুবলীগ নেতা কর্তৃক শিক্ষিকা হত্যা : মামলা তুলতে পরিবারকে আসামীদের হুমকি


শরীয়তপুর টাইমস্ ডেস্ক ঃ

শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বড়মূলনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা রুবিনা আক্তার রুমা হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন করেছে পরিবার, স্থানীয় লোকজন ও শিক্ষার্থীরা। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে ঘন্টাব্যাপি এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মামলা তুলতে আসামীরা বাদির পরিবারকে হুমকি দিচ্ছেন বলে মানববন্ধনে জানানো হয়।

এসময় নিহত রুবিনার বড় ভাই সামসুল হক, ভগ্নিপতি মান্নান সিকদার, স্থানীয় ইউপি সদস্য আমির হোসেন মল্লিক, স্থানীয় পতাই মাদবরসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। 

মামলা সূত্রে জানা যায়, শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার রায়ের কান্দি এলাকার মৃত মনির উদ্দিন হাচেন মু্ন্সীর মেয়ে স্কুল শিক্ষকা রুবিনা ২০১৮ সালের ২১ সেপ্টেম্বর  বিকেলে কাগজপত্র ফটোকপি করতে জাজিরা বাজারে যান। রাতে বাড়ি না ফিরলে বিভিন্ন যায়গায় খুঁজে তাকে না পেয়ে ২৩ সেপ্টেম্বর রুবিনার বড় ভাই সামসুল হক জাজিরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর দুপুরে বাড়ির পাশের বাঁশ বাগান থেকে রুমিনার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা কামাল মাদবর ওরফে তমি কামাল (৪৭), মেহেদী হাসান (২৬) , রাসেল মাদবর (৩৪), সজিব মাদবর (৩৩) ও রাকিব শাহকে (২৭) আসামী করে মামলা রুজু হয়। পরে কামাল ও মেহেদিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে যুবলীগ নেতা কামাল ও মেহেদী জামিনে আছেন। বাকি আসামী পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।

জানা যায়, আসামী যুবলীগ নেতা কামাল মাদবরের সঙ্গে রুবিনার সম্পর্ক ছিল। রুবিনার সব ব্যাংক বিমাসহ আর্থিক লেনদেনের সঙ্গে কামাল জড়িত ছিলেন। কামালের কাছে টাকা পেতেন রুবিনা। পরে একই উপজেলার ইতালি প্রবাসীর সঙ্গে রুবিনার বিয়ে হয়। একপর্যায়ে কামালের কাছে টাকা ফেরত চান রুবিনা। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে রুবিনাকে শারীরিক নির্যাতনের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করে কামাল ও তাঁর লোকজন।

নিহত রুবিনার বড় ভাই সামসুল হক বলেন, যুবলীগ নেতা কামালের নির্দেশে মেহেদী, সজিব, রাসেল, রাকিব মিলে আমার বোনকে শারীরিক নির্যাতন করে হত্যা করে বাঁশের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখেছিল। আমি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছি। আসামী মেহেদী আদালতে হত্যার কথাও স্বীকার করেছেন। এখন মামলা তুলতে আসামীরা আমাদের হুমকি দিচ্ছেন। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। হত্যাকরীদের আইনের আওতায় এনে ফাঁসি দাবি করছি।

মামলায় বাদী পক্ষের হাইকোর্টের আইনজীবী খান মাহমুদুল হাসান  বলেন, "বিবাদী পক্ষ পুলিশের দেয়া চার্জশীটের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে একটি রিট দায়ের করেছিল। সেই রিট এবছরের গত আগস্টে খারিজ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। এখন মামলাটির পরবর্তি কার্যক্রম জেলার নিম্ন আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত হবে। এতে শরীয়তপুরের সেশন জজকে দুই মাসের মধ্যে এ মামলায় পূর্বে পুলিশের দেয়া চার্জশিট বহাল থাকা কিংবা পুনঃতদন্ত হওয়ার বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।"

জাজিরা উপজেলার শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সি এম এনামুল হক বলেন, "আমাদের সহকর্মী রুবিনা আক্তারকে যেভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। এমন একটি চাঞ্চল্যকর হত্যাকান্ডের বিচার আরো দ্রুত হওয়া উচিৎ ছিল। আমরা শিক্ষক রুবিনা আক্তারের হত্যাকারীদের দ্রুত ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আশা করি হত্যাকারীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।"

নারী ও শিশু নির্যাতন বিরোধী সংগঠন নারী নির্যাতন দমন চাঁদনী মঞ্চের আহবায়ক জামাল মাদবর কালবেলাকে বলেন, শিক্ষিকা  রুবিনা আক্তার হত্যাকান্ডের মামলায়ও আজ ৬ বছর চলে গেলো। অথচ চাঞ্চল্যকর হত্যকান্ডের ঘটনায় বিচারকার্য নিরপেক্ষ ও দ্রুত পরিচালিত হওয়া উচিৎ ছিল। তাহলে অন্তত বার বার আমাদের এমন নৃশংস ঘটনার সাক্ষী হতে হতোনা। আশা করি শিক্ষক রুবিনা আক্তারের পরিবারকে ন্যায়বিচার দিতে অপরাধীদের দ্রুত আইনের আওতায় এনে বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপণে পদক্ষেপ নেয়া হবে।"

জাজিরা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ বলেন, আমি জাজিরা থানায় নতুন এসেছি। যতটুকু জানি মামলাটি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এই মামলার দুই আসামী গ্রেপ্তার হওয়ার পর আদালত থেকে জামিনে আছেন। মামলাটির ব্যাপারে আদালত যদি কোন নির্দেশনা দেন সেই মোতাবেক আমরা কাজ করবো।

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post