নিজস্ব প্রতিবেদক:
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পালেরচর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য আমির হোসেন সিকদার সম্প্রতি একটি বিতর্কিত মন্তব্য করে দেশজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন। একটি ভিডিওতে তাকে বলতে শোনা যায়, "ইসলাম ধর্মে গান-বাজনা হারাম কি না এটি কোরআনের আয়াত দিয়ে প্রমাণ করতে না পারলে আলেমদের পেটাবো।" এই বক্তব্য প্রকাশ্যে আসার পর ধর্মী প্রাণ সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।
তার এই বক্তব্যের পর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দার ঝড় উঠে। ইসলামি চিন্তাবিদ ও আলেমরা এটিকে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত বলে অভিহিত করেন। সাধারণ জনগণের মধ্যেও ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।
বিতর্ক চরমে পৌঁছালে আজ সোমবার (৩ ফেব্রুয়ারি) সকালে জাজিরা উপজেলার পালেরচর বাজার মাদ্রাসার মাঠে এক গণসমাবেশের আয়োজন করা হয়। সেখানে উপস্থিত আলেম এবং স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সামনে আমির সিকদার প্রকাশ্যে ক্ষমা চান।
তিনি বলেন, "আমি ভুল করেছি। আমার কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন, তাহলে আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমি কারও অনুভূতিতে আঘাত দিতে চাইনি। ভবিষ্যতে এমন ভুল আর করবো না।"
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব জালাল উদ্দিন আহমদ আমির হোসেন সিকদারের ক্ষমা চাওয়ার ব্যাপারে বলেন "ইসলাম শান্তির ধর্ম। কেউ ভুল করলে তার অনুশোচনা ও ক্ষমা প্রার্থনাকে স্বাগত জানানো উচিত। তবে ভবিষ্যতে যেন কেউ এমন উগ্র ও বিভ্রান্তিকর বক্তব্য না দেয়, সে বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি।"
এদিকে আমির হোসেন সিকদারের প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার একটি ভিডিও মোঃ বাবুল রাড়ি নামের একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শেয়ার করে লিখেছেন "এবারের মত আপনাকে হুশিয়ার করে দেওয়া হল যাতে ভবিষ্যতে আপনি বা আপনার কোন লোক বা কেউ যদি ইসলামের সাথে বিরোধিতা করে তাদের কোন অস্তিত্ব থাকবে না পৃথিবীর শুরু থেকে আজ পর্যন্ত কোন লোকই ইসলামের বিপক্ষে কথা বলে ঠিক থাকতে পারেন নাই তাই আশা করি আল্লাহ পাক সবাইকে বুঝার তৌফিক দান করুক, আমিন।"
উল্লেখ্য, পালেরচর ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আমির হোসেন সিকদার সম্প্রতি একটি বাউল গানের স্টেজে বক্তব্য রাখার সময় বলেন,"যদি কেউ কোরআন থেকে স্পষ্টভাবে দেখাতে পারে যে গান-বাজনা হারাম, তাহলে আমি মেনে নেব। আর যদি না পারেন, তাহলে এসব আলেমদের উচিত ভালোভাবে পেটানো। এতে আমি যদি মার্ডার মানলার আসামী হই, যদি জেল খাটা লাগে আমি জেল খাটবো। আওয়ামীলীগ কিন্তু ধ্বংস হয়ে যায় নাই। হয়তো প্রেক্ষাপটে পতন হইছে কিন্তু আওয়ামীলীগ মরে নাই।
এসময় তিনি বাউল গানে উপস্থিত জনতাকে বলেন আমরা খুব শীগ্রই একটি কমিটি করমু । কমিটি করার পরে পালেরচর ইউনিয়নে একটা বড় খেলা হবে। যতদিন বেচেঁ থাকি।
তিনি আরও বলেন, আমরা ইসলাম নবীর মাধ্যমে পাই নি আমরা ইসলাম পেয়েছি ওলি আউলিয়াদের মাধ্যমে। যারা গান বাজনা বন্ধ করতে আসবে তাদের ঠ্যাং (পা) ভাঙ্গতে যা লাগে আমি তাই করমু। এতে যতদিন জেল খাটতে হয় খাটমু।
এই বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই চারদিকে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। বিশেষ করে ধর্মীয় মহলে এ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা যায়।