বিজ্ঞাপণের জন্য যোগাযোগ করুন- 01966555312

শরীয়তপুরে গণপিটুনিতে আহত আরও এক ডাকাত সদস্যের মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক:
শরীয়তপুরে ডাকাতি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় গণপিটুনির ঘটনায় আরেকজন ডাকাত সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার(১ মার্চ) সন্ধ্যায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ডাকাত সদস্যের মৃত্যু হয়। এ নিয়ে গণপিটুনির ঘটনায় তিন ব্যক্তির মৃত্যু হলো। তাঁদের মধ্যে এখন পর্যন্ত একজনের পরিচয় জানতে পেরেছে পুলিশ।

নিহতদের মধ্যে যার পরিচয় মিলেছে তার নাম এবাদুল ব্যাপারী(৪৮)। তিনি শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কানারগাঁও এলাকার রহমত আলীর ছেলে। আঙুলের ছাপের(ফিঙ্গার প্রিন্ট) সাহায্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত করে পুলিশ। ময়নাতদন্তের পর এবাদুলের মরদেহ শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। পরিবারের সদস্যদের কাছে মরদেহ হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

ঘটনার সূত্রপাত গত শুক্রবার(২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে শরীয়তপুর সদর উপজেলার ডোমসার ইউনিয়নের তেঁতুলিয়া এলাকার কীর্তিনাশা নদীতে। পুলিশ বলছে, ডাকাতি করতে গিয়ে পালানোর সময় স্থানীয় জনতার রোষানলে পড়ে গণপিটুনির শিকার হয় একদল ডাকাত। এ সময় ডাকাত দলের এলোপাতাড়ি গুলিতে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে অন্তত ৮ জন আহত হন।

নিহত দুই ব্যক্তির পরিচয় এখনো পায়নি পুলিশ। তাদের পরিচয় শনাক্তের জন্য হাত ও আঙুলের ছাপ সংগ্রহ করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অপরাধ তদন্ত বিশ্লেষণ শাখা। আহত ডাকাত দলের সদস্যদের দেওয়া তথ্যে চারজনের পরিচয় পেয়েছে পুলিশ। তারা হলেন মুন্সিগঞ্জের কালিয়ারচর এলাকার রিপন(৪০), বাংলাবাজার এলাকার রাকিব গাজী(৩০), শরীয়তপুরের জাজিরার কুণ্ডেরচর এলাকার আনোয়ার দেওয়ান(৫০), মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর এলাকার সজীব(৩০)।

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম বলেন, গণপিটুনির ঘটনায় এখন পর্যন্ত তিন ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। গতকাল রাতে ঘটনাস্থলে দুজন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে একজনের পরিচয় জানা গেছে। ওই ব্যক্তি আন্তজেলা ডাকাত দলের সদস্য। তার বিরুদ্ধে ডাকাতি, হত্যাসহ বিভিন্ন অপরাধের একাধিক মামলা রয়েছে।

শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত সাড়ে নয়টার দিকে মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার রাজারচর এলাকায় কীর্তিনাশা নদীতে বাল্কহেডে করে ডাকাতি করতে আসে ১০ থেকে ১২ জনের একটি দল। তখন ওই এলাকার নৌযানের শ্রমিক ও স্থানীয় জনতা ডাকাত দলকে ধাওয়া করেন। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা গুলি, ককটেল, বোমা ছুড়ে স্পিডবোটে করে কীর্তিনাশা নদী দিয়ে পালাতে থাকেন।

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শরীয়তপুরের দাদপুর এলাকা থেকে ডোমসার তেঁতুলিয়া পর্যন্ত কীর্তিনাশা নদীর দুই তীরে ও নদীতে নেমে স্থানীয় লোকজন ডাকাতদের ধাওয়া করেন। তখন ডাকাত দলের সদস্যরা জনতার ওপর গুলি ও ককেটেল নিক্ষেপ করেন। একপর্যায়ে ডোমসার তেঁতুলিয়া এলাকায় নদীতে স্পিডবোট ফেলে একটি ইটভাটায় লুকায় ডাকাত দলের সদস্যরা। স্থানীয় জনতা ওই ইটভাটা ঘেরাও করে ডাকাত দলের সাত সদস্যকে আটক করে গণপিটুনি দেন। গণপিটুনিতে ডাকাত দলের দুই সদস্য মারা যান। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় মানুষদের সরিয়ে আহত ও নিহত ব্যক্তিদের উদ্ধার করেন।

শনিবার সকালে তেঁতুলিয়া এলাকার ওই ইটভাটা থেকে আরেক ব্যক্তিকে আটক করে জনতা গণপিটুনি দেন। পরে সকাল নয়টার দিকে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে একটি কক্ষে পুলিশি পাহারায় তার চিকিৎসা চলছে। গণপিটুনির শিকার ওই ব্যক্তির নাম রাকিব গাজী। তিনি মুন্সিগঞ্জের বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা।

শনিবার সকালে গণপিটুনির শিকার আহত পাঁচজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার সন্ধ্যায় একজনের মৃত্যু হয়।

শরীয়তপুর সদরের পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘ডাকাতি করে পালানোর সময় গণপিটুনিতে যারা নিহত হয়েছেন, তাদের পরিচয় শনাক্তে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে কাজ করছি। ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাহায্যে একজনের পরিচয় মিলেছে। অন্যদের পরিচয় শনাক্তের কাজ চলছে। ওই ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি। শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে থাকা একজনের পরিচয় পাওয়া গেছে। তার মরদেহ পরিবারের সদস্যদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলমান।’

Post a Comment

Thnaks For Comment

Previous Post Next Post