শরীয়তপুর টাইমস্ ডেস্ক :
শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার বিলাসপুর ইউনিয়নের কাজিয়ারচর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সালাউদ্দিন মাস্টার ও জলিল মাদবর গ্রুপের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে শতাধিক ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এঘটনায় ১৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে একজনের হাতের কব্জি বিচ্ছিন্ন হয়ে ও আরেকজন বোমার আঘাতে গুরুতর আহত হয়েছেন।
শনিবার (৫ এপ্রিল) সকালে উপজেলার কাজিয়ারচরে এ সংঘর্ষ শুরু হয়, যা দীর্ঘক্ষণ ধরে চলে। খবর পেয়ে জাজিরা থানা পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
এঘটনায় আহতরা হলেন, কাজিয়ারচর দাইমদ্দিন খলিফা কান্দির বাসিন্দা কালাম খানের ছেলে মারুফ(২৫), জামাল মাদবর কান্দি এলাকার বাসিন্দা হযরত আলীর মেয়ে জোৎস্না(২৫), মুন্সি কান্দি এলাকার বাসিন্দা আলী হোসেনের স্ত্রী ফাতেমা বেগম(৫৫), মুন্সীগঞ্জ জেলার লৌহজং থানার বেজগাও এলাকার বাসিন্দা রাজ্জাক মাদবরের স্ত্রী বিনা(৪৫), বিলাসপুরের আহসান উল্লাহ মুন্সীর কান্দির বাসিন্দা সেকান্দার মুন্সীর ছেলে হাসান মুন্সী(৫০), দাইমদ্দিন খলিফা কান্দি গ্রামের বাসিন্দা হারুন খলিফার ছেলে সজিব(২২), বুধাইরহাট মুলাই বেপারীর কান্দি এলাকার বাসিন্দা রহমান খানের ছেলে নাইম(১৯), একই এলাকার বাসিন্দা মজিবর মাদবরের ছেলে সাকিব(১৯), মামুন খার ছেলে কামাল(১৯), পেকান সরদারের ছেলে বিজয়(১৯), জহুরদ্দিন বেপারীর ছেলে রেজাউল বেপারী(১৯), কাজিয়ারচর আলীমউদ্দিন মাদবর কান্দি এলাকার বাসিন্দা সামসুদ্দিন মাদবরের ছেলে শহরআলী(৫০), আহসানউল্লাহ মুন্সী কান্দি এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী খানের ছেলে রিফাত(১৯), নাওডোবা ইউনিয়নের হাজী জৈনদ্দিন মাদবর কান্দির বাসিন্দা মহিজদ্দিন করালের ছেলে আবু আলেম(৪২), বিলাসপুরের মুলাই বেপারী কান্দির বাসিন্দা দিনইসলাম বোপরীর ছেলে শুভ বেপারী(১৯)।
আহতদের মধ্যে গুরতর অবস্থায় মারুফ ও হাসান মুন্সী নামে দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় প্রেরণ করা হয়েছে এবং শহরআলী নামে একজন জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি রয়েছেন। বাকী আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে চলে যায়।
হাসপাতালে ভর্তি থাকা শহরআলী মাদবর বলেন, আমি ঢাকায় থাকি। কাজিয়ারচর এলাকায় মারামারি দেখতে গিয়েছিলাম । সেখান থেকে আমাকে ধরে নিয়ে বেদম মারধর করেছে। এছাড়া আমি কিছুই জানিনা।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: কুদ্দুস বেপারী ও যুবলীগ নেতা আব্দুল জলিল মাদবরের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ বিরোধকে কেন্দ্র করে এলাকায় একাধিকবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
গত বছরের ৫ আগস্ট এর পর পুলিশ জাজিরা উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও বিলাসপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: কুদ্দুস বেপারী ও বিলাসপুর ইউনিয়নের যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও পরাজিত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী জলিল মাদবরকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে পাঠায়। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছিল। তবে কুদ্দুস বেপারীর সমর্থক ও মৎসজীবীলীগ নেতা সালাউদ্দিন মাস্টার ও জলিল মাদবরের গ্রুপ এ সংঘর্ষের ঘটনাটি ঘটিয়েছে বলে জানা যায়।
এদিকে সংঘর্ষের ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। সেখানে দেখা যায়, একটি খোলা মাঠে মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে দুই পক্ষের লোকজন। অনেকেই হেলমেট পরে বালতি থেকে ককটেল ছুঁড়ে মারছে, যা বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করছে।
বিষয়টি জানতে সালাউদ্দিন মাস্টার ও জলিল মাদবরের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাদের পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিলাসপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কুদ্দুস বেপারী বলেন, কাজিয়ারচর এলাকায় সালাউদ্দিন মাস্টার ও জলিল মাদবর গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষের বিষয়ে জানতে পেরে আমি আগেই পুলিশকে জানিয়েছিলাম। এঘটনায় আমার কোন সম্পৃক্ততা নাই।
জাজিরা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ দুলাল আকন্দ বলেন, “বিলাসপুরের কাজিয়ারচরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দু পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”