শরীয়তপুরের সখিপুরে শুক্রবার যেন এক মানবিক উৎসবের আয়োজন হলো। সকাল থেকেই শহীদ সিরাজ সিকদার ডিগ্রি কলেজ মাঠে হাজারো মানুষের ভিড় জমতে থাকে। কারো হাঁটুর ব্যথা, কারো চোখের সমস্যা, কারো শ্বাসকষ্ট—সবার আশা একই, বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা পাওয়া। সেই প্রত্যাশার জবাব মিলল জামায়াতের সার্বিক সহযোগিতায় পিএনআরএফআর ট্রাস্ট আয়োজিত ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে।
দিনভর ক্যাম্পে ৩৫ জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীদের দেখেন। বাত ব্যথা, গাইনি, মেডিসিন, অর্থোপেডিকস, শিশু ও চর্মরোগ—প্রায় সব বিভাগেই রোগীদের পরীক্ষা-পরীক্ষা এবং বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করা হয়। প্রায় ৩ হাজার মানুষ চিকিৎসা সেবা পেয়েছেন এবং এদিন তাদের মুখে স্বস্তির হাসি ফুটেছে।
শরীয়তপুর–২ (নড়িয়া–সখিপুর) আসনে জামায়াতের মনোনীত সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. মাহমুদ হোসেন বলেন, বয়স্কদের বাত ব্যথার কষ্ট সবচেয়ে বেশি। তাই এবার বিশেষভাবে বাত ব্যথার চিকিৎসকদের সংখ্যাই বেশি রাখা হয়েছে। চিকিৎসা দেওয়ার পাশাপাশি রোগীদের সচেতন করাও আমাদের লক্ষ্য।
৭৫ বছর বয়সী রহিমা বেগম বলেন, বয়স হইছে, পয়সা নাই। শহরে ডাক্তার দেখাতে গেলে খরচ অনেক। আজ বিনা টাকায় ডাক্তার দেখাইলাম, ওষুধও দিলো। সত্যিই মনে হইল কেউ আমাদের কথা ভাবছে।
৭০ বছরের আব্দুল মালেক সরদার বলেন, প্রেসক্রিপশন দিলে খুশি হতাম। কিন্তু বিনামূল্যে ওষুধও পেয়ে অবাক হইছি। ডাক্তার সময় নিয়ে কথা বলেছে, গ্রামের মানুষদের জন্য বড় উপকার হলো।
মাঠজুড়ে ফ্রি রেজিস্ট্রেশন, ব্লাড প্রেসার–ডায়াবেটিস পরীক্ষা, শিশুদের চিকিৎসা, বয়স্কদের জন্য আলাদা বসার ব্যবস্থা এবং গোছানো ওষুধ বিতরণ কেন্দ্র ছিল। স্বেচ্ছাসেবকরা সারাবেলা ছুটে চলেছেন, আর রোগীদের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মানসিক সমর্থন দিয়েছেন।
ডা. মাহমুদ হোসেন আরও জানান, গত এক বছরে আমরা জেলার প্রায় বারো হাজার মানুষের কাছে স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছেছি। এই উদ্যোগ আরও বড় পরিসরে, আরও নিয়মিতভাবে চালিয়ে যেতে চাই।
৬৮ বছর বয়সী জয়নাল মাস্টার বলেন, রাজনীতি বড় কথা না। মানুষের পাশে কে দাঁড়ায়—সেটাই গুরুত্বপূর্ণ। আজকের এই আয়োজন দেখে মনে হলো সত্যিই কেউ আমাদের কথা ভাবছে।
শরীয়তপুরের এই ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প শুধুই চিকিৎসা নয়, এটি মানবিকতার এক উজ্জ্বল উদাহরণ—বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের উপস্থিতি, রোগীর সন্তুষ্টি এবং সেবার গোছানো ব্যবস্থাপনা মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমী স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম।
