জাতীয় নাগরিক কমিটির(এনসিপি) সহযোগী যুব সংগঠন জাতীয় যুব শক্তি শরীয়তপুর জেলা শাখার নতুন কমিটি ঘোষণার পরপরই একের পর এক পদত্যাগের খবর পাওয়া যাচ্ছে। এখন পর্যন্ত (রবিবার সন্ধা) কমিটির সদস্যসচিব আমিন মোহাম্মদ জিতুসহ পাঁচজন পদত্যাগ করেছেন বলে জানা যায়।
সংগঠন সূত্রে জানা যায়, শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত ৯টার দিকে সংগঠনটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হয়। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই ফেসবুকে প্রথম পদত্যাগের ঘোষণা দেন সদস্য-সচিব আমিন মোহাম্মদ জিতু।
এরপর আরও চারজন নেতা পদত্যাগ করেন। তারা হলেন যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল হোসেন সরল, যুগ্ম সদস্য-সচিব সাবরিন ইসলাম, সংগঠক রবিউল হাসান এবং যুগ্ম সদস্যসচিব রেজাউল করিম আদিব। তারা প্রত্যেকেি ফেসবুক স্ট্যাটাসের মাধ্যমে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত জানান।
এছাড়াও দলীয় একাধিক সূত্র জানায়, নবগঠিত কমিটিকে ঘিরে অসন্তোষ বাড়ছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে আরো কয়েকজন পদত্যাগ করতে পারেন।
নবগঠিত শরীয়তপুর জেলা কমিটির সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাতে সংগঠনটির ৪১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি এক বছরের জন্য অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি।
এতে নতুনদের পাশাপাশি পুরনো কয়েকজন নেতাকেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কমিটি অনুমোদন দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক অ্যাড. মো. তারিকুল ইসলাম ও সদস্য-সচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম। নবগঠিত কমিটিতে কাওসার মৃধাকে আহ্বায়ক ও আমিন মোহাম্মদ জিতুকে সদস্য-সচিব করা হয়।
বিষয়টি নিয়ে প্রথম ফেসবুকে দেওয়া স্ট্যাটাসে আমিন মোহাম্মদ জিতু লেখেন, ‘আমি, আমিন মোহাম্মদ জিতু, জাতীয় যুব শক্তি এনসিপির সদ্য ঘোষিত জেলা কমিটির সদস্যসচিব হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছি।
তবে ব্যক্তিগত কিছু বিশেষ কারণে বর্তমানে আমি এই দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে অসমর্থ। সংগঠনের কার্যক্রমে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয় এবং দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন অব্যাহত রাখতে পারে- এমন কাউকে সুযোগ দেওয়ার স্বার্থে আমি পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ এরপর পর্যায়ক্রমে আরও চার নেতা স্ট্যাটাস দেন। এর মধ্যে যুগ্ম সদস্য-সচিব রেজাউল করিম আদিব লেখেন, ‘একজন কর্মী যখন নিজের ঘাম, শ্রম ও বিশ্বাস দিয়ে সংগঠনকে বড় করে তোলে, তখন সে শুধু পদ আশা করে না, সে আশা করে সম্মান। কিন্তু যখন সেই সম্মানকে পদমর্যাদার আড়ালে লুকিয়ে রাখা হয়, তখন পদ আর মর্যাদা এক থাকে না।
আমি বৈষম্যবিরোধী কার্যক্রমের দায়িত্বে থাকা সদস্য হিসেবে কাজ করেছি। তবে নবগঠিত কমিটিতে আমাকে ২ নম্বর যুগ্ম সদস্যসচিব হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আমার অজান্তেই। তাই পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
নবগঠিত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. কামাল হোসেন সরল লেখেন, ‘এর আগে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নড়িয়া কমিটিতে আমাকে আহ্বায়ক করার কথা ছিল, কিন্তু করা হয়নি। এনসিপিতেও প্রত্যাশিত পদ দেওয়া হয়নি। এসব কারণ এবং ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
সংগঠক রবিউল হাসান লিখেছেন, ‘জুলাই আন্দোলনে আমরা মাঠে ছিলাম, রক্ত দিয়েছি। আমাকে যে পদে রাখা হয়েছে, তার চেয়ে ভালো পদ আমি ডিজার্ভ করি। তাই নিজের সিদ্ধান্তে পদত্যাগ করেছি।’
যুগ্ম সদস্য-সচিব সাবরিন ইসলাম বলেন, ‘কমিটিতে আমাকে রাখা হয়েছে, এটা আমি জানতাম না। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছিলাম, কিন্তু কোনো পদে ছিলাম না। সম্ভবত সেখান থেকেই নাম এসেছে। তাই পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছি।’
নবগঠিত কমিটির সদস্য-সচিব আমিন মোহাম্মদ জিতু বলেন, ‘আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে আমার কর্মকাণ্ড এখনও অব্যাহত। তবে ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি। লিখিত পদত্যাগপত্র ডাকযোগে পাঠিয়েছি।’
এ ব্যাপারে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক কাওসার মৃধা বলেন, ‘সদ্য কমিটি ঘোষণা হয়েছে। ফেসবুক ও বিভিন্ন মাধ্যমে পাঁচজনের পদত্যাগের খবর শুনেছি। তবে এখনো অফিসিয়ালি কারো পদত্যাগপত্র পাইনি। কেন বা কী কারণে পদত্যাগ করেছেন, তা জানি না।’
জাতীয় যুব শক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব ডা. জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘শরীয়তপুরে নতুন কমিটির পাঁচজন সদস্য পদত্যাগ করেছেন, এটা আপনার কাছ থেকেই জানলাম। অফিসিয়ালি এখনও কোনো পদত্যাগপত্র আমাদের হাতে আসেনি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখব।’
