শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেড়েছে চুরি ও ছিনতাইয়ের মত ঘটনা। গত ৩০ দিনে অন্তত ২৮টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগ করছেন না ভুক্তভোগীরা। রোগী ও স্বজনদের কাছ থেকে টাকা, মোবাইল, দামি গয়নাসহ নানা মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এতে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত ভুক্তভোগী ও হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে হাসপাতালটির সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট দাবী করে চুরি ও ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে সকলকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন রোগী ও স্বজনরা। অন্যদিকে সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হচ্ছেন চিকিৎসা সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। ডাক্তার ও নার্সরা ভয়ে ফোন অথবা মূল্যবান জিনিসপত্র হাতে নিয়ে ঘুরেন।
ভেদরগঞ্জ উপজেলার প্রায় ৩,০৩,৫৩৫ মানুষের একমাত্র চিকিৎসা সেবা কেন্দ্র ৫০ শয্যার ভেদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রতিদিন হাসপাতালের বহির্বিভাগে নানা বয়সী প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ রোগী চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। অন্যদিকে জরুরি বিভাগে ২০০ থেকে ৩০০ রোগী প্রতিদিন চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন। একারণে চিকিৎসকদের রুমে ভিড় থাকায়। দীর্ঘ সময় লাইন পড়ে চিকিৎসকদের রুম কিংবা টিকিট কাউন্টারের সামনে। রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ের এই সুযোগে একটি চক্র নারীদের ব্যাগ থেকে টাকা, মোবাইল, দামি গয়নাসহ নানা মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না হাসপাতালটিতে ভর্তি রোগী ও তাদের স্বজনরাও। এ নিয়ে একাধিকবার অভিযোগ করা হলেও হাসপাতালটির সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট হওয়ায় কোনরকম সহযোগিতা করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।
গত সেপ্টেম্বর মাসের ৩০ তারিখ থেকে অক্টোবর মাসের ৩০ তারিখ পর্যন্ত প্রায় ২৮ টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে হয়রানির ভয়ে থানায় অভিযোগ করছে না ভুক্তভোগীরা। এছাড়াও প্রতি রাতে ভর্তি থাকা রোগী ও তাদের স্বজনদের টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকার সহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে যাচ্ছেন চোর চক্রটি।
চিকিৎসা নিতে আসা নারগিস বেগম বলেন, আমার ছেলের জন্য ডাক্তার দেখাতে টিকিট নিচ্ছিলাম। হটাৎ দেখি আমার ব্যাগের চেইন কাটা। পরে দেখি আমার ব্যাগে থাকা ১২ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। আমি হাসপাতালে জানাইলাম তারা বললো এখানে সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট। সিসিটিভি ফুটেজ থাকলে দেখতে পারতাম কিভাবে টাকা চুরি হলো। এই ধরনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যদি নিরাপত্তা না থাকে মানুষ কোথায় যাবে। এই হাসপাতালে আমাদের কোনো নিরাপত্তা নাই।
আরেক ভুক্তভোগী মাহমুদা খানম বলেন, আমার দুই বছরের শিশুকে নিয়ে ডাক্তারের চেম্বারের সামনে লাইনে দাঁড়িয়েছিলাম। সেখানে থাকা অবস্থাতেই তার ব্যাগ থেকে ১০ হাজার টাকা ও একটি কানের দুল চুরি হয়।
হাসপাতালে সেবা নিতে আসা লাভলু সরদার বলেন, মাসখানেক আগে আমার মায়ের গলা থেকে এক ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন নিয়ে গেছে। আজ আমার স্ত্রীর মোবাইল ও টাকা নিয়ে গেছে। হাসপাতাল প্রশাসনকে মৌখিকভাবে জানানো হলেও তারা প্রতিনিয়তই বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে দিন দিন চুরি-ছিনতাইয়ের ঘটনা আরও বাড়ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুমন কুমার পোদ্দার বলেন, একমাসে আমার কাছে বেশকিছু চুরির অভিযোগ এসেছে। হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট থাকার সুযোগে চোর চক্রটি রোগী ও স্বজনদের মালামাল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। উর্ধতন কতৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। সিসিটিভি ক্যামেরা গুলো ঠিক হলে চুরি ছিনতাই বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা সবসময় চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও স্বজনদের এ ব্যাপারে বার বার সতর্ক করি। এছাড়াও আমাদের নিরাপত্তাকর্মী না থাকায় এ ধরনের ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটেছে।
ভেদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুল ইসলাম বলেন, “হাসপাতালে চুরির ঘটনার খবর আমরা জানতে পেরেছি। সাদা পোশাকে আমাদের পুলিশ কাজ করছে। অল্প সময়ের মধ্যেই সেখানে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। তবে সিসিটিভি ক্যামেরা নষ্ট থাকায় চোর শনাক্ত করতে সমস্যা হচ্ছে।”
